দুঃখের মতো এত বড় পরশপাথর আর নেই?
উত্তরঃ দুঃখ মানুষের সকল জড়তা ও দৈন্য দূর করে তাকে করে তোলে সুন্দর ও আত্মশক্তিতে বলীয়ান। দুঃখের দহনে জাগ্রত হয় মানবসত্তা এবং জীবন হয় আলোকিত। দুঃখের পরশেই মানুষ সত্যিকার মনুষত্ব লাভ করে। তাই মানুষের জীবনের সকল প্রাপ্তির মূলে দুঃখ পরশপাথরের মতই কাজ করে। দুঃখের পরে সুখ আসে- এটাই পৃথিবীর চিরায়ত নিয়ম। দুঃখের দহনে পড়েই মানুষ খাঁটি সোনা অর্থাৎ প্রকৃত মানুষে পরিণত হয়। পরশপাথরের ছোয়ায় লোহা যেমন সোনায় পরিণত হয়, তেমনি দুঃখ নামক পরশপাথরের ছোয়ায় মানুষের সব গ্লানি, দুঃখ, দৈন দূর হয়ে জীবন সার্থক হয়ে ওঠে। মানুষের বিবেক মহান হয়, অন্যের ব্যথায় সে ব্যথিত হয়। যে জীবনে কোন দুঃখ- কষ্ট, জ্বালা- যন্ত্রণা নেই, সে জীবন কোন পণ্য জীবন নয়। কারণ যার মধ্যে কোন বেদনার অনুভূতি নেই, দুঃখ দারিদ্রের সীমাহীন কষ্ট সে বুঝতে পারে না। বিলাসিতায় জীবন অতিবাহিত হলে সঠিকভাবে মনুষ্যত্বের বিকাশ হয় না। জগতের সকল মহান ব্যক্তিরা দুঃখকে জয় করেই সাধনার শীর্ষে আরোহন করেছেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সারা জীবন দুঃখ-দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করেছেন, কিন্তু তবুও দুঃখের কাছে মাথা নত করেননি। তিনি লিখেছেন, হে দারিদ্র, তুমি মোরে করেছ মহান। বাংলায় প্রবাদ আছে, কষ্ট ছাড়া কেষ্ট মেলে না। তাই বলিষ্ঠ প্রত্যয়, দৃঢ় মনোবল দিয়ে দুঃখকে জয় করে সুখ ছিনিয়ে আনতে হবে। সাহসী মানুষ দুঃখকে জয় করার জন্য এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সত্যের বানী প্রচার করতে গিয়ে যুগে যুগে পদে পদে লাঞ্চিত ও জর্জরিত হয়েছে সত্যের সেবক মহামানবরা। তবুও তার দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করে গেছে মানবজাতির কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য। তারা সবাই দুঃখ নামক পরশপাথরের স্পর্শে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছেন। দুঃখ ও কষ্টের মাধ্যমেই মানুষ জীবনের সার্থকতা খুঁজে পায়, লাভ করে অনাবিল সুখ ও আনন্দ। তাই দুঃখে ভেঙে না পড়ে তাকে মোকাবিলা করার শক্তি অর্জন করাই হচ্ছে জীবন- সাধনার পূর্বশর্ত।